শামীমের বাবা বর্তমানে জীবিত নেই। তিন ছেলের মধ্যে শামীম মেজো। বড় ভাই গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। শামীমের জন্ম সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামে। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাইস্কুল পাশ করার পর তাদের আর গ্রামে দেখা যায়নি।
নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও উপজেলার একজন স্কুল মাস্টারের ছেলে হয়ে উঠেন আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ডন। অস্ত্রধারী দেহরক্ষী নিয়ে চলাফেরা ও রাজনীতির অন্তরালে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান তিনি। ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে আটক হওয়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদের পরই নাম উঠে আসে এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীমের। অস্ত্রধারী দেহরক্ষী বেষ্টিত হয়ে সব সময় চলাফেরা করা এই শামীমকেও গতকাল শুক্রবার ৭ দেহরক্ষীসহ আটক করা হয়।
শামীমের গ্রেফতারের পর তাকে যুবলীগের পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেয়ার পর নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের কোন সভা-সমাবেশে তাকে দেখা না গেলেও নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় যুবলীগের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেয়ার পর এনিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
তবে জি কে শামীম জেলা আওয়ামীলীগের কোন পদবীতে আছে এমন কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও জি কে শামীমকে অর্থের বিনিময়ে একটি পক্ষ তাকে জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি করতে চেয়েছিল এমন গুজব শহরময় ভেসে বেড়াচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই জানান, ডা: সেলিনা হায়াত আইভী নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি। জি কে শামীম জেলা আওয়ামীলীগের কোন পদেই নেই। এনিয়ে ধ্রুমজাল সৃষ্টি হয়েছে।
নারায়নগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়া জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ বাদল জি কে শামীমকে সহ-সভাপতি করার প্রস্তাব দিলে মেয়র আইভীসহ অন্যান্যদের বিরোধীতায় তা বাতিল হয়ে যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামীলীগের একাধিক নেতা আশঙ্কা করছেন, কার্যকরী পরিষদকে না জানিয়ে গোপনে জি কে শামীমের নাম সহ-সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রে পাঠানো হয়ে থাকতে পারে। যদিও এধরণের বক্তব্যকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন।
সবার মনে একটাই প্রশ্ন কে এই জি কে শামীম। ছোটখাটো মানুষ হলেও শামীমের ক্ষমতার দাপট ছিল আকাশসমান। রাজধানীর সবুজবাগ, বাসাবো, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় জি কে শামীম প্রভাবশালী ঠিকাদার হিসেবে পরিচিত। গণপূর্ত ভবনের বেশির ভাগ ঠিকাদারি কাজই জি কে শামীম নিয়ন্ত্রণ করেন। বিএনপি-জামায়াত শাসনামলেও গণপূর্তে শামীম ছিলেন ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তি।
যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু বলেন, যুবলীগে শামীমের কোনো পদ নেই। তিনি নিজেই নিজেকে সমবায় বিষয়ক সম্পাদক বলে বেড়ান। এ নিয়ে যুবলীগে কয়েকবার আলোচনাও হয়েছে। তাকে কয়েকবার এমন মিথ্যা প্রচারণা থেকে বিরত থাকতে বলাও হয়েছে। বাবলু আরও দাবি করেন, জিকে শামীম এক সময় যুবদলের সাবেক সহ-সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি বলে শুনেছি।
প্রসঙ্গত, ১৬৫ কোটি টাকার এফডিআর, ১.৮ কোটি নগদ টাকাসহ যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে জিকে শামীমকে শুক্রবার রাজধানীর নিকেতনে অভিযান চালিয়ে আটক করে র্যাব। এসময় তার সাতজন দেহরক্ষীকেও আটক করা হয়।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে শুক্রবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এলিট ফোর্স সদস্যরা কার্যালয় ঘেরাও করে এবং অভিযান শুরু করে।
ঘটনাস্থলে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা অভিযান চলাকালে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর করে রাখা ১৬৫ কোটি টাকার নথি এবং ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা নগদ ও বিদেশি মুদ্রা জব্দ করেছি। জব্দকৃত টাকা অবৈধভাবে আয় করেছেন যুবলীগ নেতা। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডার কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। শামীমের মালিকানাধীন জিকেবি অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের অফিস থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, সাতটি শটগান এবং বিপুল পরিমাণ গুলি জব্দ করেছি। আগ্নেয়াস্ত্র চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারি কারসাজির কাজে ব্যবহার করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
‘এফডিআরের ২৫ কোটি টাকা নিজের নামে রেখেছিলেন যুবলীগ নেতা। ১৪০ কোটি টাকা তার মায়ের নামে রেখেছিলেন,’ বলেন আলম।
এর আগে অবৈধ ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগে বুধবার যুবলীগ নেতা খালিদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।